মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর:/অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদ মোল্লার দাপট, বদলি বাণিজ্য অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ অভিযোগের পাহার
- আপডেট সময় : ০৮:২৮:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭৪ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক,
চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদ হোসেন মোল্লা। যার দাপট ও স্বেচ্ছাচারিতায় এককভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে অধিদপ্তরটি।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন, বদলি বাণিজ্যসহ প্রায় ডজনের অধিক অভিযোগ এই কর্মকর্তাকে ঘিরে।
এছাড়াও একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে মাত্র পাঁচ মাসে ৫০টির অধিক বিমান ভ্রমণের অভিযোগে উঠেছে যা অধিদপ্তরের কাছে অনুমোদনের নথি নেই বলে জানা গেছে। এই কর্মকর্তা খোঁদ সরকারি কর্মকর্তা হয়ে কিভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সেই প্রশ্নও এখন অধিদপ্তরটি ঘিরে।
সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে জাহিদ হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে উঠে এসেছে এমন সব তথ্য, যা শুধু এই কর্মকর্তা নয়—একটি সরকারি দপ্তরের কাঠামো ও সিস্টেমকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্য বলছে, জাহিদ হোসেন মোল্লা “বঙ্গবন্ধু পরিষদ” নামে একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির মাধ্যমে সাবেক সরকারের আস্থাভাজন হয়ে পুরো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন।কর্মকর্তাদের ওপর ভয়ভীতি ও চাপ সৃষ্টি করে নিজস্ব নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। যে কর্মকর্তাকে পছন্দ নয় তাকে যেকোনো সময় বদলি করে দেন। আর যাকে পছন্দ তাকে পদোন্নতি, বিভিন্ন সুবিধাসহ বিশেষ দায়িত্বও দেন তিনি। এভাবেই পুরো দপ্তরে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেন যেখানে তার কথা ছাড়া কেউ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে সাহস পেতেন না।
এদিকে খোঁদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বদলি-বাণিজ্যের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন তিনি। অবৈধভাবে মোটা অর্থের বিনিময়ে বদলি ও পছন্দের পোস্টিংয়ে করে দেন তিনি।
এদিকে সরকারি এই অধিদপ্তরটির একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ বিগত সরকারের সময় দপ্তরটির সবচেয়ে সুবিধাভোগী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। সেই সময় থেকেই বদলি-বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন শুরু করেন তিনি।
*** অস্বাভাবিক সম্পদের পাহাড়:
বছরের পর বছর ধরে সম্পদ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে তার। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি ও তার পরিবারের নামে রয়েছে একাধীক ফ্লাট, বিলাসবহুল বাড়ি, শত শত বিঘা জমি, উচ্চমূল্যের প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন সম্পদ।
জানাগেছে, ঢাকার জাপান গার্ডেন সিটিতে কোটি টাকার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে তার। মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণাধীন।গ্রামের বাড়িতে ‘রাজকীয়’ দালানকোঠা ও শত বিঘা জমি, উচ্চমূল্যের প্রাইভেট কারসহ অনেক কিছু। আর এই নিজস্ব গাড়িতেও অবৈধভাবে “ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড” ব্যবহার করেন এই কর্মকর্তা।
*** বিমানযোগে ঘনঘন ভ্রমণ—অস্বাভাবিক ব্যয়বহুল যাতায়াত
মাত্র পাঁচ মাসে তিনি ৫০টিরও বেশি বিমানযাত্রা করেছেন—যা কোনো সরকারি কর্মকর্তার জন্য একেবারেই অস্বাভাবিক।
*** যাতায়াতের রুটগুলো:
ঢাকা ⇄ চট্টগ্রাম, ঢাকা ⇄ কক্সবাজার, ঢাকা ⇄ বরিশাল–ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম ⇄ রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম ⇄ বান্দরবান, চট্টগ্রাম ⇄ ফেনী–কুমিল্লা–লাকসাম, টেকনাফ–সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ভ্রমণ।
এসব যাত্রার বেশিরভাগ ভ্রমণই তিনি বিমানযোগে করেছেন বলে জানা গেছে।
তার যাত্রার তারিখ ও সময়সহ সকল তথ্য আমাদের হাতে রয়েছে। তবে অধিদপ্তরটি তার এসব যাতায়াতের খরচ, উদ্দেশ্য বা অনুমোদনের কোনো নথি দেখাতে পারেনি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এই বিপুল ভ্রমণ ব্যয়ের অর্থ কোথা থেকে আসে?
*** রাজনৈতিক প্রভাব: সাবেক রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ব্যবহার
এদিকে জানা গেছে, তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের আত্মীয়কে বিয়ে করেছেন তিনি। আর সেই পারিবারিক রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে অতীতে বদলি–বাণিজ্য, বিশেষ সুবিধা এবং দপ্তরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ এসব অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এখনও তিনি সেই প্রভাব ব্যবহার করে নিজেকে নিরাপদ রাখতে এবং প্রভাব বিস্তার অব্যাহত রাখতে মরিয়া বলে জানাচ্ছেন খোঁদ তার দপ্তরের কর্মকর্তারা।
এমনকি ক্ষমতার পরিবর্তনের পরও তিনি নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন—যা দপ্তরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
উচ্চ মাধ্যমিক সনদ জটিলতা: যশোর বোর্ড ও স্কুল প্রশাসনের নীরবতা
জানা গেছে এই কর্মকর্তার এসএসস (SSC) সনদ যাচাই করতে গেলে যশোর বোর্ডের কর্মকর্তারা তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান স্কুল প্রশাসনও কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি।
একই সঙ্গে তার এই সনদের ব্যাপারে কথা বলব না বলে জানিয়ে দেন শিক্ষা বর্ডের এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ করার অশ্বিকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ঝামেলায় ফেলবেন না।”
ফলে সন্দেহ আরও গভীর হয়, যে এই কর্মকর্তার শিক্ষাগত যোগ্যতায় গুরুতর অসামঞ্জস্য থাকতে পারে।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বেশিরভাগ কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পান।
তাদের ভাষ্য, “বদলি করে দিবে—এই ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় না।বঙ্গবন্ধু পরিষদ দিয়ে এমন নিয়ন্ত্রণ করতেন যে কেউ মুখ খুলতে পারত না। দপ্তরে তার কথাই ছিল শেষ কথা।”
অভিযোগগুলো নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তার কাছ থেকে কোন উত্তর মেলেনি।



















