নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রথম বাংলা
সরকারের সড়ক ভবনের নেতৃত্বে আজও সক্রিয় আওয়ামী লীগ চক্র। সংস্কারের নামে উল্টো চলছে আওয়ামীপন্থীদের পুনর্বাসন। সু কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শেখ পরিবারের মদদপুষ্ট কর্মকর্তাদের।
গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও সড়কে নানা অনিয়মের সক্রিয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় আসছে রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরের চক্রে রয়েছে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ভয়ংকর পরিকল্পনা। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান। ঠিকাদার সঙ্কট দেখিয়ে রাস্তাঘাট মেরামত রক্ষণাবেক্ষণে কৃত্রিম অব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করে তৈরি করা হবে ইতিহাসের সর্বোচ্চ জনদুর্ভোগ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মইনুল হাসানের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হবে এই মাস্টার প্ল্যান। তিনি সেন্ট্রাল বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের চলমান সদস্য।
তিনি ২০২২-২৩ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদে বিনা ভোটে নির্বাচন করে নির্বাচিত হয়েছিলেন কাউন্সিলর মেম্বার। সে সময় তার ব্যালট নম্বর ছিল ১২১।
শুধু তাই নয়, শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে গঠিত সড়ক কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই মইনুল হাসান। স্বৈরাচার এরশাদ আমলে বুয়েট ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন সওজের এই প্রধান প্রকৌশলী। তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ আছে প্রতিবেদক এর কাছে।
প্রধান প্রকৌশলী মইনুল হাসানের চাচাতো ভাই শামসুল আলম কুতি কলিক পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এবং নড়াইল জেলা পরিষদের আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সদস্য। সাধারণ ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে কর্ম জীবন শেষ করল জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিটি ভোট দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় কিনে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেন তিনি। মইনুল হাসানের ভাগ্নে সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ মুনতাসির হাফিজ সড়ক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির আওয়ামী লীগ প্যানেলের দুইবারের নির্বাচিত সভাপতি।
এর আগে একই সমিতির পরপর দুইবারে নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক। অভিযোগ রয়েছে সড়ক নিয়ন্ত্রণের জন্যই মইনুলের বিশেষ হস্তক্ষেপী মুনতাসির এর উত্থান হয়। মধ্যম সারির যেকোনো কর্মকর্তার পদায়ন বা বদলিতে মইনুল ভাগ্নে মুনতাসির এর আশীর্বাদ পুষ্ট হতে হতো।
সেতু ভবনে আগুনের নেপথ্য কাহিনী:
অবাক করা তথ্য হচ্ছে, পাঁচ আগস্ট এর আগে মহাখালী সেতু ভবন ঢাকা সড়ক বিভাগ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও বনানী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টোল প্লাজা সহ বিভিন্ন স্থাপনা আগুনে পুড়ে দেন নয় তথ্যের নায়ক ছিল ওবায়দুল কাদের ও মইনুল হাসান। সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর সহযোগিতা নিয়েই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন আওয়ামীলীগ তথা ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগ স্থাপনের গুলোতে ব্যাপক ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালান। এই নাশকতার পুরো অর্থায়ন করেন প্রধান প্রকৌশলী মইনুল হাসান। মহাখালী এলাকা জুড়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলন কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ছাত্রলীগ নাশকতা চালালেও সেতু ভবনের পার্শ্ব মিটার রেডিয়াসের মধ্যে অবস্থিত মইনুল হাসান এর সরকারি বাসভবন ছিল সম্পূর্ণ সুরক্ষিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সড়ক কর্মকর্তা বলেন, মইনুল হাসান সড়কের সর্বোচ্চ ধূর্তদের একজন। প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাসের মধ্যেই সরকারি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থে দুটি সরকারি গাড়ি পরিবর্তন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের। নিজের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি বাসভবনে কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়াই ঠিকাদার ও ঢাকা সড়ক বিভাগের সত্যবিদাই আওয়ামী পন্থী নির্বাহী প্রকৌশলী আহাদুল্লাহর কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকার আসবাবপত্র ও ইন্টেরিয়র এর কাজ করান। পুরস্কার হিসেবে নির্বাহী প্রকৌশলী আহাদুল্লাহ কে প্রধান প্রকৌশলী মঈনের একক হস্তক্ষেপে গত ৯ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের প্রদান করা হয়।
আওয়ামী পন্থীদের নদীর বিহীন পুনর্বাসন ও পদায়ন:
সহজের এই প্রধান প্রকৌশলী মইনুল এর বিরুদ্ধে আছে আওয়ামীপন্থীদের পুনর্বাসন উপাদানের আরও ব্যাপক অভিযোগ। অন্তর্ভুক্তি সরকারের নতুন সচিব ও উপদেষ্টা কে সংস্কারের কথা বলে আওয়ামী পন্থী কর্মকর্তাদের পদয়ন করেছেন তিনি। পুনর্বাসন করেছে আওয়ামী দুরধীনে পরীক্ষিত ছাত্রলীগ নেতাদের। এ কারণে ঠিকাদার সহ কর্মকর্তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক অসন্তোষ। ৫ ই আগস্ট পরবর্তী সময় তার নানা অপকর্মের হতা তত্ত্বাবধায় প্রকৌশলী মোঃ আবুল কালাম আজাদ ওরফ আজাদের অপসারণ এর ব্যাপক দাবি উঠলে উল্টো তাকে গত 8 সেপ্টেম্বর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে টোকিওরমেন্ট সার্কেল থেকে লোক দেখানো সরিয়ে দিলেও; আরো বড় দায়িত্ব সড়ক ও গবেষণাগারে তত্ত্বাবধক প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করা হয়। ১৫ ই আগস্ট সহ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত যাবতীয় দিবসের সড়কের সকল প্রোগ্রামের অন্যতম আয়োজক ছিলেন তিনি। পছন্দের ঠিকাদারদের সুবিধা দিতে সাধারন ঠিকাদারদের কোণঠাসা করে রাখার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তিনি ছিলেন আওয়ামীলীগ যুগের মইনুল সিন্ডিকেটের দুর্নীতি ও বদলি বাণিজ্যের অর্থ সংগ্রাহক।
এতসব অভিযোগের ব্যাপারে কয়েকবার তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেননি অভিযুক্ত প্রধান প্রকৌশলী মইনুল হাসান। কেন তাকে পদে রাখা হবে এমন প্রশ্নেরও জবাব দিতে পারেননি সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রধান প্রকৌশলী মইনুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার মুঠোফোনে কল করলেও রিসিভ করেননি তিনি।