নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রথম বাংলা
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) আতিকুর রহমান ও সকল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও তাদের সিন্ডিকেটদের দ্রুত অপসারণসহ ১৪ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন বৈষম্যের শিকার এবং বে-আইনিভাবে চাকুরীচ্যুত শ্রমিক ও কর্মচারীরা।
রোববার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগস্থ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের প্রধান ফটক আটকে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে এসব দাবি জানান তারা।
আন্দোলনকারীরা বলেন, এই হোটেলে কিছু দুর্নীতিবাজ দুর্নীতির মাধ্যমে হোটেলকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নারী শ্রমিকের প্রতি অসৎ আচরণের দায়ে অভিযুক্ত। সচিব, সিভিলাইজেশন এন্ড ট্যুরিজম মিনিস্ট্রি এবং সচিব, মন্ত্রি পরিষদ (কেবিনেট ডিভিশন) হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তিকর কথোপকথনের তথ্য প্রমাণ রয়েছে। এসব অভিযোগগুলোকে আড়াল করার জন্য নিজেরাই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে।
এছাড়া একের পর এক ডিসকাউন্ট দিয়ে হোটেলের ব্যবসা অধিকতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে যা ফাইনান্স ডিপার্টমেন্টে নথিভুক্ত। প্রতিটি বোর্ড মিটিংয়ের দিনে প্রত্যেক বোর্ড মেম্বারদের পরিবারের জন্য টেক এওয়ে ডিনার পাঠানো হয় যা পূর্বে কখনো ছিল না। এতে করে হোটেল তার রেভিনিউ হারাচ্ছে। যদিও এর কোন স্ট্যান্ডার্ড পলিসি নেই।
ইন্ডিয়ান জেনারেল ম্যানেজার লিমেরিডিয়ান হোটেল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর অত্র হোটেলে কিভাবে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পেল এবং নিয়োগের পর তার দলবল নিয়ে অবৈধভাবে অত্র হোটেলে নিয়োগ প্রদান করেছে। হোটেলের শুরু থেকে প্রত্যেকটি জেনারেল ম্যানেজার হোটেলের মধ্যেই বসবাস করতেন। কিন্তু ইন্ডিয়ান জেনারেল ম্যানেজার কিভাবে গুলশানে ২ লাখ টাকা ভাড়ার এপার্টমেন্ট বরাদ্দ পেল। এতে প্রতি মাসে কোম্পানির ২ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। একই সাথে এফ এন্ড বি বিভাগের ডিরেক্টরের জন্য গুলশানে এপার্টমেন্ট বরাদ্দ আছে। যা হোটেলের জন্য অতিরিক্ত ব্যয়। ইন্ডিয়ান জেনারেল ম্যানেজার সবসময় শ্রমিক এবং কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণ করে থাকেন। এর জন্য শ্রমিক ও কর্মচারীর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। জেনারেল ম্যানেজার অন্যায়ভাবে যাকে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন এবং অনেককে জোরপূর্বক চাকরিচ্যুত করেছেন।
তারা বলেন, আইটি ডাইরেক্টর মি. সুবীর বৈষ্ণব অন্যায়ভাবে তার অধীনস্থ কর্মচারীদেরকে স্থায়ী না করে দিনের পর দিন কন্ট্রাকচুয়াল রেখে কাজ করে নিয়েছেন। যদিও আইটি ডিপার্টমেন্ট অনেক বেশি সিকিউরড ডিপার্টমেন্ট। যার জন্য ইমেইল হ্যাকিংয়ের ঘটনাও ঘটেছে। সে বোর্ড মেম্বার না হওয়া স্বত্ত্বেও পি.এন.সি এবং বোর্ড মিটিংয়ে ক্যাশ ইনভেলপ রিসিভ করেছেন দিনের পর দিন। অ্যালকোহল এবং মেয়ে নিয়ে গুলশান রেসিডেন্সে দিনের পর দিন পার্টি করেছেন ইন্ডিয়ান কনসালটেন্টদের সাথে। বিএসএল অফিসার মি. ইমাম একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট যোগদান করেছিলেন। একজন এক্সিকিউট হাউজকিপার এটা বুঝতে পারার পর প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করার কারণে অন্যায়ভাবে মি.সুবীর এবং মি.ইমাম তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। ডাইরেক্টর হিউম্যান রিসোর্স, মি. নাজমুল হুদা তুহিন বেআইনিভাবে পে-রোল বৃদ্ধি করেছে। ২২৬ রুমের হোটেলে এত এক্সিকিউটিভ প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকটি এক্সিকিউটিভের বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি সাধারণ শ্রমিক কর্মচারীদের চেয়ে তুলনামূলক অনেক বেশি। যে কারণে প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠানকে মোটা অংকের টাকা বেতন বাবদ প্রদান করতে হয়।
আন্দোলনকারীরা বলেন, কন্ট্রাকচুয়াল শ্রমিক দিনের পর দিন চাকরি করলেও তাদের স্থায়ীকরণ হচ্ছে না। কিন্তু এই এইচআর ডিরেক্টর বাইরে থেকে সরাসরি শ্রমিক স্থায়ীকরণ করেছেন। এইচআর ডিরেক্টর শ্রমিক আইন অনুকরণ করেননি যা ছিল তার নিজের ব্যক্তিগত পলিসি। শ্রমিক এবং কর্মচারীর মোবাইলে ম্যাক আইডি কিভাবে নিয়েছেন তার কোন নির্দিষ্ট পলিসি আমাদের জানা নেই। আমরা প্রতিটি শ্রমিক এবং কর্মচারী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কর্মরত অবস্থায় প্রতিটি শ্রমিক-কর্মচারী তার মোবাইল ফোন সিকিউরিটি গেটে জমা দিতে বাধ্য করেছেন। যে কারণে, পরিবারের কোন সমস্যা হলে তারা কর্মরত অবস্থা কোন যোগাযোগ করতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। শ্রমিক এবং কর্মচারী তাদের মিটিং চলাকালীন সময়ে এইচআর ডিরেক্টর ভয়েস রেকোর্ডারের মাধ্যমে তাদের ভয়েস রেকোর্ড করে রেখেছেন। যা সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন।
এইচআর ডিরেক্টর বেআইনিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিআইসিসি-তে কর্মরত শ্রমিক এবং কর্মচারীদের এক মাস পর্যন্ত ছুটিতে রাখে এবং গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আকস্মিকভাবে চাকরিচ্যুত করেন। যারা এখন পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করছেন। তিনি প্রত্যেক শ্রমিক এবং কর্মচারীর আনুমানিক ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ আত্মস্বাৎ করেছেন।
তারা বলেন, যে ফ্যাসিবাদের জন্য পূর্ববর্তী সরকারের পতন হয়েছে সেই একই ফ্যাসিবাদের কারণে এই হোটেলের পতন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় হোটেলের শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজ করার কোনো পরিবেশ থাকবে না। বিভিন্ন সচিবদের ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজের পদোন্নতি এবং সুবিধা নিয়ে আসছেন। অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপকদের মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেছেন। একই সাথে জিএম এবং এইচআর ডিরেক্টর তাদের নিজস্ব লোকবল নিয়োগ করেছেন। এইচআর ডিরেক্টর অবগত থাকা স্বত্ত্বেও জাল সার্টিফিকেটের মাধ্যমে বেশ কিছু কর্মকর্তা- কর্মচারী এখনো স্বদর্পে চাকরিতে বহাল আছে। যা একটি ফৌজদারী অপরাধ। টেন্ডার প্রক্রিয়ার অসচ্ছতায় যেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী এবং ঠিকাদারদের সুসম্পর্কের মাধ্যমে অবৈধভাবে দরপত্র বন্টিত হয় এবং অনেক সময় বাজার মূল্যের সাথে দ্রব্যমূল্যের বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যা প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিকভাবে ক্ষতিকর।
টেন্ডার প্রকিয়াকে সহজিকরণ, লভ্যাংশকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আনা এবং দুর্নীতিগ্রস্থ ঠিকাদার ও কর্মচারীদের জন্য কঠোর শাস্তি ব্যবস্থা করার জরুরি।
এই প্রতিষ্ঠানে দুইটি কর্তৃপক্ষ বিএসএল কর্তৃপক্ষ এবং হোটেল কর্তৃপক্ষ থাকার কারণে ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সব কর্মচারীদের একটি কর্তৃপক্ষের আওতায় আনা জরুরি।
আমাদের দাবি এই দুর্নীতিগ্রন্থ ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জেনারেল ম্যানেজার, এইচআর ডিরেক্টর এবং আইটি ডিরেক্টর এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।
এ সময় তারা ১৪ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো:
১. এমডিসহ উল্লেখিত সকল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও তাদের সিন্ডিকেটদের দ্রুত অপসারণ করতে হবে।
২. বি আই সি সি প্যাড ইস্যুর সকল শ্রমিককে চাকরিতে পুর্নবহাল।
৩. ২০২০ সাল হতে এই এইচআর ডিরেক্টর এবং তার সাজানো তদন্ত কমিটি দ্বারা অবৈধভাবে বহিষ্কৃত সকল শ্রমিকদের চাকরি ফেরত দিতে হবে।
৪. দীর্ঘদিন যাবত বঞ্চিত শ্রমিকদের পদোন্নতি দিতে হবে।
৫. সকল শ্রমিকদের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করতে হবে এবং শ্রমিক ম্যানেজমেন্টের মধ্যে বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে।
৬. সিওডিতে উল্লেখিত হোটেল নীতি অনুযায়ী চার্ট অফ ডিমান্ড) তুলে দিয়ে পূর্ববর্তী হোটেল বিদ্যমান নীতি (২০২০-২০২১) এর ন্যায় পুর্নবহাল করতে হবে।
৭. শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার সমূহ যাহা বিগত দিন বিলুপ্ত কর হয়েছে তা ফিরিয়ে দিতে হবে।
৮. বি আই সি সি এর বকেয়া সার্ভিস চার্জ দ্রুত শ্রমিকের মধ্যে বণ্টন করার জোর দাবি জানাই।
৯. ব্যবসা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে প্রয়োজনবোধে অভিজ্ঞ সেলস টিম তৈরি করতে হবে।
১০. শ্রমিক ইউনিয়নের ক্যাফেটেরিয়াতে তাদের অধিকার আদায়ের মিটিংয়ে ম্যানেজমেন্টের হস্তক্ষেপ করা যাবে না। শ্রমিদের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।
১১. শ্রমিকদেরকে মানসম্মত খাবার পরিবেশন সহ অন্যান্য সুবিধাদি প্রদান করতে ম্যানেজমেন্ট বাধ্য থাকবে।
১২. শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবা উন্নত করার সাপেক্ষে মেডিকাল বিভাগকে সুসংগঠিত করা হোক।
১৩.মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় এমন কোনো নির্দেশনা হোটেল ম্যানেজমেন্ট এবং বাংলাদেশ সার্ভিসেস লি. কর্তৃপক্ষ দিতে পারবে না।
১৪. নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি পরিহার করে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘদিন যাবৎ হোটেলে কর্মরত সকল কন্ট্রাচুয়াল শ্রমিকদের স্থায়ী নিয়োগ দিতে হবে।