নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রথম বাংলা
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পালিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। কোথাও তার কোনো খোঁজ নেই। এদিকে তার একাধিক নারী কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়েছে। আগে থেকেই ছিল হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। গেল জুনে চুপিসারে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। তবে প্রবল গণআন্দোলনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে অন্য অনেকের মতো আছাদুজ্জামান মিয়াও গা-ঢাকা দেন।
সাবেক এই ডিএমপি কমিশনারকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দিতে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার ব্যনারে পোস্টারে আছাদুজ্জামানকে ‘বহু গুম, খুন, মিথ্যা মামলা দেওয়ার মাস্টারমাইন্ড, হাজার কোটি টাকার মালিক মহাদুর্নীতিবাজ, খুনি, নারী লিপ্সু, ছাত্র-জনতাকে গুলি করার পরামর্শদাতা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
পোস্টারে আরও বলা হয়েছে, আছাদুজ্জামান মিয়া ‘জুলাই গণহত্যা, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের গণহত্যা এবং ডিএমপি কমিশনার থাকার সময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্রদের আন্দোলন এক দফায় রূপ নেওয়ার মধ্যে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। ওই দিনের পর থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করা পুলিশের সাবেক ও বর্তমান অনেক কর্মকর্তাও আড়ালে চলে গেছেন। এমনই একজন সাবেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়া, যিনি শেখ হাসিনা সরকারের অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে সবখোনে দাপট খাটাতেন।
সরকার পতনের পর ফরিদপুরে আছাদুজ্জামানের দখল থেকে নিজেদের জমি উদ্ধার করেছে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। আবার আছাদের ছোট ছেলে আসিফ মাহাদীনের নামে রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকার ট্রিপ্লেক্স বাড়িতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা হামলাও চালিয়েছে। তবে ফাঁকা ছিল সেই বাড়ি।
এদিকে আগে থেকেই আছাদুজ্জামান, তার স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ের নামে দেশে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান চেয়ে আবেদনও জমা পড়েছে।
গত ১০ আগস্ট থেকে একের পর এক ফাঁস হয়েছে নারী লিপ্সু আছাদুজ্জামানের যৌন কেলেঙ্কারি। এ বিষয়ে দেশ টিভি, বাংলাভিশনসহ কয়েকটি চ্যানেল খবরও প্রচার করেছে। অডিওগুলোতে সাবেক এই ডিএমপি কমিশনারকে অধস্তন নারী পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রলোভনের সঙ্গে অশালীন যৌনালাপ করতে শোনা যায়।
তবে খোঁজ নেই বিতর্কিত সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা, রাজধানীর নিকুঞ্জের আলিশান বাড়ি, ধানমন্ডিতে নিজের ফ্ল্যাট বা ইস্কাটনে স্ত্রী আফরোজা জামানের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তা।
এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্র জনতার প্রচার করা পোস্টারে আছাদুজ্জামান মিয়াকে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হলো। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ছাত্রদল নেতা জনি হত্যা মামলার আসামি সাবেক ডিএমপি কমিশনার যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন বলেও কানাঘুষা আছে।