নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রথম বাংলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবিরকে হত্যা অভিযোগে গ্রেফতার ব্যবসায়ী তানভীর আলী রিমাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন গুলশান থানা পুলিশ।
পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, রিমাণ্ডে নেয়ার পর থেকেই তানভীর আলী বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মামলা ও হত্যা সম্পর্কে আরও প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রবিবার ( ১৫ সেপ্টেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুমিন মিয়া জানান, তানভীর আলীর বিরুদ্ধে একটা মামলা হয়েছে গুলশান থানায়। আমরা আসামি কোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর যেহেতু এটা মামলার বিষয় সেহেতু এটার অনেক প্রাইভেসির বিষয় আছে। তদন্তের বিষয় আছে। বিষয়টা যেহেতু এখনও তদন্তধীন আছে আমরা চেষ্টা করছি দমন-পীড়নে কারা জড়িত, আর্থিক লেনদেনের কি সম্পৃক্ততা আছে, সে বিষয়ে জানতে কাজ করছি। আমরা কোর্টে দিয়েছি কোর্ট রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
তিনি জানান, গত ১৯শে জুলাই বিকাল সাড়ে ৩টায় গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকার বারিধারা পার্ক রোডে আন্দোলনের সময় হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলায় শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবির, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ডিজিস্টসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন ২০শে জুলাই সকালে ডিজিস্ট ও আবিরের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় গত ২০ই আগস্ট হাসান মাহমুদ নামে একজন বাদী হয়ে গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ওই মামলার অন্যতম আসামি ব্যবসায়ী তানভীর আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার পর তাকে আদালতে হাজির করে অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ প্রসঙ্গে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদ আলম বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবির হত্যা মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে গুলশানের ব্যবসায়ী তানভীর আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবির হত্যা মামলাসহ আরও নানা বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তানভীর আলীর বিরুদ্ধে বিগত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ অর্থ উপার্জন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলা চলমান রয়েছে। একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও ছিল এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন একাধিকবার নোটিশ দিলেও তিনি হাজির হননি।
সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকার দায়ে তাকে ১ নম্বর আসামি করে গুলশান থানায় মামলা দায়ের হয়। সেই মামলাতেই গুলশানের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলাটিতে তানভীর আলী ছাড়াও স্থানীয় ১৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকির হোসেন বাবুল, ১৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিমুল, গুলশান থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান সুজন, সাধারণ সম্পাদক মানিক, প্রচার সম্পাদক সোহাগ, গুলশান শ্রমিক লীগের মো. মহসিন আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।